Hi

০৩:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নিয়োগে আসছে পরিবর্তন

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার জানিয়েছেন, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে এসব পদে নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য একটাই—যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষা প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

রোববার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান। দিবসটি উপলক্ষে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল— ‘শিক্ষকতা পেশা: মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি।

অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “আমরা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই যা মানসম্মত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও মানবিক। আধুনিক বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ, উদ্ভাবনী ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার উপযোগী নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য।

তিনি জানান, নৈতিকতার পাশাপাশি পরিবেশ সচেতনতা ও পরমত সহিষ্ণুতা গড়ে তুলতে সরকার কাজ করছে। তাঁর ভাষায়, “শিক্ষিত মানুষ মানে কেবল বইপড়া নয়, শিক্ষিত মানে দায়িত্বশীল, সহনশীল ও মানবিক হওয়া। আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু পরীক্ষার জন্য নয়, জীবনের জন্য প্রস্তুত করতে চাই। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “এনটিআরসিএর মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ও প্রিন্সিপাল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

এতদিন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পর্যায়ের শিক্ষক ও প্রভাষক পদে নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্ব ছিল এনটিআরসিএর হাতে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী প্রধান ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের হাতে। সম্প্রতি কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা হারানোর পর এবার প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নিয়োগেও সেই ক্ষমতা হারাতে যাচ্ছে পরিচালনা পর্ষদ।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর এনটিআরসিএ আয়োজিত এক কর্মশালায় সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে সরকারের তদারকিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার কাঠামো নির্ধারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে।

অধ্যাপক আবরার বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাস্তবসম্মত ও ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারায় কাজ করছে। নির্ভুল পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, এনসিটিবির বিধিমালা সংস্কার, ইউজিসির কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটি চালু করা হয়েছে, আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে উন্মুক্ত আবেদনপত্রের মাধ্যমে স্বচ্ছ নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি এসএসসিতে ‘অতিরঞ্জিত ফল’ না প্রকাশের নীতি গ্রহণ এবং বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মেধা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “কারিগরি শিক্ষার নতুন রূপরেখা তৈরি হয়েছে, সেকেন্ডারি লেভেলের রূপরেখাও চূড়ান্ত পর্যায়ে। নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার কাজ চলছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কল্যাণ ট্রাস্ট ও বোর্ডগুলোর সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ব্যানবেইস প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উচ্চতর গবেষণার সুযোগও বাড়ানো হয়েছে।

ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারে তিনি জানান, অনলাইন বদলি, ই-ফাইলিং, এডুটেক প্রশিক্ষণ এবং অ্যাকসেস টু গ্লোবাল নলেজ কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও গবেষণার মানোন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে।

বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ১২ জন গুণী শিক্ষককে সম্মাননা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, ইউজিসির চেয়ারম্যান এস এম এ ফায়েজ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম, ইউনেস্কোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি সুজান ভাইজ এবং আইসিইএসসিও মহাপরিচালক সালিম এম আল-মালিক।

শিক্ষকদের উদ্দেশে অধ্যাপক আবরার বলেন, “আপনারাই শিক্ষার আসল কারিগর, জাতি গঠনের স্থপতি। আমরা শিক্ষকদের পদোন্নতি, মর্যাদা বৃদ্ধি ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদানে কাজ করছি। সহশিক্ষা কার্যক্রম, গার্ল গাইড, বয় স্কাউট ও সাংস্কৃতিক আয়োজনকে আরও উৎসাহিত করা হচ্ছে।

প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নিয়োগে আসছে পরিবর্তন

আপডেট : ০৯:৫৬:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার জানিয়েছেন, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে এসব পদে নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য একটাই—যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষা প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

রোববার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান। দিবসটি উপলক্ষে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল— ‘শিক্ষকতা পেশা: মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি।

অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “আমরা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই যা মানসম্মত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও মানবিক। আধুনিক বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ, উদ্ভাবনী ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার উপযোগী নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য।

তিনি জানান, নৈতিকতার পাশাপাশি পরিবেশ সচেতনতা ও পরমত সহিষ্ণুতা গড়ে তুলতে সরকার কাজ করছে। তাঁর ভাষায়, “শিক্ষিত মানুষ মানে কেবল বইপড়া নয়, শিক্ষিত মানে দায়িত্বশীল, সহনশীল ও মানবিক হওয়া। আমরা শিক্ষার্থীদের শুধু পরীক্ষার জন্য নয়, জীবনের জন্য প্রস্তুত করতে চাই। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “এনটিআরসিএর মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ও প্রিন্সিপাল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

এতদিন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পর্যায়ের শিক্ষক ও প্রভাষক পদে নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্ব ছিল এনটিআরসিএর হাতে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী প্রধান ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের হাতে। সম্প্রতি কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা হারানোর পর এবার প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নিয়োগেও সেই ক্ষমতা হারাতে যাচ্ছে পরিচালনা পর্ষদ।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর এনটিআরসিএ আয়োজিত এক কর্মশালায় সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে সরকারের তদারকিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার কাঠামো নির্ধারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে।

অধ্যাপক আবরার বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাস্তবসম্মত ও ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারায় কাজ করছে। নির্ভুল পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, এনসিটিবির বিধিমালা সংস্কার, ইউজিসির কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটি চালু করা হয়েছে, আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে উন্মুক্ত আবেদনপত্রের মাধ্যমে স্বচ্ছ নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি এসএসসিতে ‘অতিরঞ্জিত ফল’ না প্রকাশের নীতি গ্রহণ এবং বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মেধা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “কারিগরি শিক্ষার নতুন রূপরেখা তৈরি হয়েছে, সেকেন্ডারি লেভেলের রূপরেখাও চূড়ান্ত পর্যায়ে। নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার কাজ চলছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কল্যাণ ট্রাস্ট ও বোর্ডগুলোর সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ব্যানবেইস প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উচ্চতর গবেষণার সুযোগও বাড়ানো হয়েছে।

ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারে তিনি জানান, অনলাইন বদলি, ই-ফাইলিং, এডুটেক প্রশিক্ষণ এবং অ্যাকসেস টু গ্লোবাল নলেজ কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও গবেষণার মানোন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে।

বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ১২ জন গুণী শিক্ষককে সম্মাননা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, ইউজিসির চেয়ারম্যান এস এম এ ফায়েজ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম, ইউনেস্কোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি সুজান ভাইজ এবং আইসিইএসসিও মহাপরিচালক সালিম এম আল-মালিক।

শিক্ষকদের উদ্দেশে অধ্যাপক আবরার বলেন, “আপনারাই শিক্ষার আসল কারিগর, জাতি গঠনের স্থপতি। আমরা শিক্ষকদের পদোন্নতি, মর্যাদা বৃদ্ধি ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদানে কাজ করছি। সহশিক্ষা কার্যক্রম, গার্ল গাইড, বয় স্কাউট ও সাংস্কৃতিক আয়োজনকে আরও উৎসাহিত করা হচ্ছে।