দেশে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিনই নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়েছে, আর চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এ বছর বর্ষা মৌসুম দীর্ঘ হওয়ায় এবং নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এডিস মশার প্রজনন বেড়েছে। ফলে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া উভয় রোগেই আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা জটিল অবস্থায় ভর্তি হচ্ছেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, রক্তক্ষরণ ও প্লেটলেট কমে যাওয়ার মতো জটিলতা দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তরা দীর্ঘস্থায়ী জয়েন্ট পেইন বা গিঁটে ব্যথায় ভুগছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, চিকুনগুনিয়ার ব্যথা অনেক সময় কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, যা কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি এক রোগী জানান, তিন দিন ধরে জ্বর, শরীরে ব্যথা আর মাথা ঘোরা নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। ডাক্তাররা বলেছেন ডেঙ্গু হয়েছে। এখন প্লেটলেট কমে যাচ্ছে। আরেকজন রোগী বলেন, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে গিঁটে ব্যথা এতটাই বেড়েছে যে হাঁটাচলা করতেও কষ্ট হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শিশু হাসপাতালে প্রতিদিনই নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। অনেক হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে জায়গা সংকট দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে চিকিৎসা সেবায় বিঘ্ন ঘটছে। অনেক রোগীকে করিডরে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। শুধু ঢাকাতেই নয়, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেটেও একই চিত্র। জেলা হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা চিকিৎসা না নিয়েই বাসায় অবস্থান করছেন। এতে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার ও সিটি করপোরেশনের কার্যকর উদ্যোগ জরুরি। নিয়মিত ফগিং, লার্ভিসাইড ছিটানো এবং জনসচেতনতা বাড়ানো ছাড়া এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে বাসাবাড়ি, নির্মাণাধীন ভবন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থায় জমে থাকা পানি পরিষ্কার করার ওপর জোর দিচ্ছেন তারা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া মোকাবিলায় বিশেষ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে আলাদা ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। তবে রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরি হলো সচেতনতা। বাসাবাড়ি ও আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি সরানো, মশারি ব্যবহার করা এবং মশার কামড় থেকে বাঁচার ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ডেঙ্গু রোগীরা অনেক দেরি করে হাসপাতালে আসেন। তখন জটিলতা বেড়ে যায় ও চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই জ্বর হলে দ্রুত পরীক্ষা করাতে হবে এবং প্রয়োজনে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। সময়মতো চিকিৎসা নিলে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। জনগণকে সচেতন করা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সরকারের ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণই এ সংক্রামক রোগ মোকাবিলার মূল চাবিকাঠি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বলছে, ডেঙ্গু কোনো জটিল রোগ নয়। সমস্যা হচ্ছে রোগীরা জ্বর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিচ্ছেন না। দেরিতে হাসপাতালে আসায় তাদের অবস্থা গুরুতর হয়ে যাচ্ছে। বড় হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত ফ্লুইড সরবরাহ রয়েছে, কোথাও ঘাটতির খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে, রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ সব সময় বেশি থাকে। প্রতি বছর প্রশ্ন ওঠে মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন মশক নিধনই এসব রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিদিনই ফগিং ও লার্ভিসাইড ছিটানো হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। কারণ অনেক এলাকায় এখনো জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশেষজ্ঞদের দেওয়া পরামর্শই প্রতিপালন করা হচ্ছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পানি জমতে না দেওয়া, মশার ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতন করা হচ্ছে।
০৩:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া
-
নিজস্ব প্রতিনিধি
- আপডেট : ০২:১২:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
- ৪৪ জন দেখেছে
জনপ্রিয়